মধ্যযুগীয় গালি

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র পারাবত ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:২৯:৪০ সন্ধ্যা



#মধ্যযুগীয় গালি#

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রামাণ্য ইতিহাস ও তথ্য গাইডে মধ্যযুগের সময় সীমানা চিহ্ণিত করেছে'৫ম শতাব্দী থেকে ১৫ শতাব্দী পর্যন্ত' পিরীয়ডকে| *তথ্যসূত্র-শব্দ সংস্কৃতির ছোবল-জহুরী|

যদিও আমাদের বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধানের ৮৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যযুগ ১১শ শতাব্দী থেকে ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত| আমরা যদি মধ্যযুগ বলে প্রথমে উল্ল্যেখিত টাইম লাইন ধরি|তাহলে সপ্তম শতকের কথাই যদি ধরি তাহলে দেখবো সভ্যতার স্বর্ণযুগ কোথায় তার

ভিত্তিমূল স্থাপন করেছে|এ ব্যাপারে ইন্জিনিয়ার এনামুল হক তার" বিবাহ ও নারীবাদ" গ্রন্থে বলেন "মানবতার চূড়ান্ত বিকাশ তথা মানবিকতার চূড়ান্ত

বিকাশ,রাসূল সা. কে ঘিরে গড়ে উঠা সাহাবাদের মদীনার সম্প্রদায়ে ঐ সময়ে ঘটেছে|আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো -Humanity passed its peak in the 7th century-সপ্তম শতকে মানব সভ্যতা তার উচ্চতরশিখরে পৌছেছিল|"

তিনি আরো বলেন "রাসূল সা. এবং প্রথম দুই খলিফার সময় মনুষত্যের ও মানবিকতার যে বিকাশ ঘটেছিল,তা আর কখনো হবার নয়| তবে হ্যাঁ revival ও renewal এর প্রচেষ্টা চলছে ও

চলবে এবং তা কখনো peak বা চূড়ায় উঠবে| তবে সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার সম্ভাবনা নাই|"

আমরা নিরপেক্ষ অনেক ঐতিহাসিকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবো ইনশাল্লাহ আজকের প্রতিটি সভ্যতার ভালো দিকগুলোর অনেকাংশেই এই সপ্তম শতকের সভ্যতার কাছে ঋণী| মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলতে আমাদের মানসপটে যে চিত্র ভেসে উঠে তা হলো শুধু মনিব তার দাসের উপর অত্যাচার

করছে,নারীকে অন্ধকারে ঘরে আবদ্ধ করে দাসের মত অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে এরকম অসংখ্য নির্যাতনের দৃশ্য|পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত থাকলেও ইসলামের ইতিহাসে তা বিরল| আমাদের মা বোনেরা কখনো আজকের পাশ্চাত্যের ফ্যামিনিষ্টদের মত অধিকার আর সম্মান অর্জনের জন্য কোন বিপ্লব করে নি ও করতে হয় নি কারণ সপ্তম শতকে যখন তাদের সম্পত্তিসহ যাবতীয় প্রয়োজন মাফিক তাদের অধিকার দেওয়া হয়েছিল তখন

রোম সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্য,ভারতীয় সমাজ,চীন সাম্রাজ্যে নারীদের,.মানুষ হিসেবে গণ্য করতে কার্পণ্য করতো| তাই আমাদের ইতিহাস তথা মধ্যযুগীয় বর্বরতা গালি আমাদের উপর প্রয়োগ করা ইতিহাসের বিকৃতি|

এ ব্যাপারে অধ্যাপক শামস উদ্দিন

মিয়া (ইতিহাসে গোল্ড মেডেলিষ্ট) তার "ইসলাম এবং আধুনিক বিশ্ব" গ্রন্থে বলেন মধ্যযুগ অন্ধকার যুগ ছিল না|এই যুগ ছিলো সবচেয়ে সভ্য এবং আলোকিত জাতির যুগ|মধ্যযুগ হচ্ছে আধুনিক যুগের জননী|মধ্য যুগের

নৈতিক মূল্যবোধ এতো উচ্চ, পরিশীলিত এবং যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক ছিলো যার অনেক পিছনে বর্তমান যুগ রয়েছে|

এ ব্যাপারে প্রবন্ধকার

জুহুরীর প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারি তিনি বলেন" মধ্যযুগে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ( রাসূল সা. )মানুষের জন্ম হয়|হেরার রোশনী দুনিয়ার অন্ধকার দূর করে|মধ্যযুগের ৮শ বছর স্পেনের জ্ঞান বিজ্ঞানের ঝর্ণাধারা থেকে ইউরোপের খীষ্ট্রান, জ্ঞান পিপাসার্তরা আসতো জ্ঞান বারি পান করতে|ইবনে সীনা,আল গাজ্জালী,আল ফারাবী,ইবনে খালদুন, এরা তো সবই মধ্যযুগের স্বর্ণ ফসল|এম আকবর আলীর "বিজ্ঞানে মুসলমানের অবদান" পুস্তকগুলোর পৃষ্ঠা উল্টালেই তারা বুঝতে পারবেন,মধ্যযুগ অন্ধকার না আলোকময় ছিলো|স্টেনলি লেন

পুল,হিট্রি,মুয়ীর,টয়েনবির মতো ঐতিহাসিকরা মধ্যযুগসম্পর্কে এই রায় দিয়েছেন|"

মধ্য যুগে যারা বর্বর জীবন যাপন করতো,তারা মুসলমান ছিলো না|ছিলো ভিন্ন জাতি,যারা আধুনিক যুগে সভ্য হয়েছে|মুসলিম স্পেনের কর্ডোভায় ও আন্দাসুলিয়ায় এবং নিশাপুরে লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়েছে|বর্বর মানুষ

সব যুগে ছিলো মধ্যযুগেও ছিলো|এ যুগেও আমাদের দেশেও আছে|চার্চশাসিত ইউরোপে যে বর্বরতা ছিলো তা যখন আমরা ইসলামের

অনুশাসনের কথা বলি তখন আমাদের উপর চাপানো হয়| যা নিঃসন্দের মিথ্যাচার অথবা অজ্ঞতা|

বিষয়: রাজনীতি

১১৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File